শরীরের মালমসলা
(সুকুমার রায়)
Text
এখানে একটা বাক্স আছে। বাক্সটা কাঠের তৈরি। শুধু কাঠ? না, তাতে লােহার কব্জা আর তালা, তার চারধারে পিতলের কাজ আছে। আর কি আছে? আর তার গায়ে চক্চকে গালা বা বালিশ আছে। সামনে ঐ একটা*
কি দিয়ে তৈরি হচ্ছে? ইঁট কাঠ*
জিনিস। এই সমস্ত হল তার মাল*
এতে অমুক জিনিস এতখানি আন্দাজ*
সামনে একটা মানুষ বসে*
একটু নমুনা শুনবে?
দু মণ ওজনের একটি মানুষের*
যাবে বেশ বড়ো-বড়ো*
আছে তা যদি আলগা করে বার*
বারো হাত লম্বা বারো হাত চওড়া*
অনেকখানি গ্যাস পাবে বাজারে যার*
পাওয়া যায়।
ঐ ওজনের একজন সাধারণ মানুষের*
ওজনের প্রায় গোটা ত্রিশেক মোমবাতি তৈরি হতে পারে।*
পাওয়া যাবে যে তা দিয়ে দশহাজার*
কয়লার মধ্যেও অতখানি অঙ্গার থাকে না।
খোঁজ করলে একটা শরীরের মধ্যে থেকে প্রায় কুড়ি চামচ নুন তার দু-তিন*
অনায়াসেই বার করা যেতে পারে।
🕸️যে-সমস্ত জিনিস না হলে শরীর টিঁকতে পারে না তার একটি হচ্ছে লোহা। এই যে রক্তের রঙ দেখছ, টক্টকে লাল, শরীরে লোহা কম পড়লেই সে রও ফ্যাকাসে হয়ে যায়, মানুষ দুর্বল হয়ে পড়ে, কঠিন ব্যারাম দেখা দেয়। তখন মানুষকে লোহা-মেশানো ওষুধ খাওয়াতে হয়। শরীরে যে লোহার মসলা থাকে, ইচ্ছা করলে তা থেকে লোহা ধাতু বার করে খাঁটি শক্ত লোহা বানানো যায়। একজন সুস্থ মানুষের শরীর থেকে যে পরিমাণ লোহা বেরোয় তা দিয়ে এরকম মােটা একটি পেরেক তৈরি হতে পারে যে, একটা আস্ত মানুষকে অনায়াসে সেই পেরেক থেকে টাঙিয়ে রাখা যায়।
🕸️মানুষের শরীরে যে হাড় থাকে তা থেকে দুটি জিনিস খুব বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়–চুন আর ফস্ফরাস্। চুন দিয়ে কত কাজ হয়, তা সকলেই জান। ফস্ফরাস দিয়ে দেশলাইয়ের জ্বালানি মসলা তৈরি হয়, আর ইঁদুর মারবার সাংঘাতিক বিষ তৈরি হয়। অনেক ওষুধেও ফস্ফরাসের ভাগ থাকে। হাড় পুড়িয়ে জমির সঙ্গে মেশালে যে চমৎকার সার হয় সেও ঐ ফসফরাসের গুণে। একটি মানুষের শরীর থেকে সে পরিমাণ খাঁটি ফস্ফরাস্ বার করা যায় তা খাওয়ালে অন্তত পাঁচশো মানুষ মারা পড়বে। দেশলাই বানালে তাতে প্রায় আটলক্ষ দেশলাইয়ের মসলা হবে।
সন্দেশ(অগ্রহায়ণ-পৌষ, ১৩২৬)
।। সমাপ্তি।।