নন্দগুপী
(সুকুমার রায়)
হঠাৎ কেন দুপুর রােদে চাদর দিয়ে মুড়ি
চোরের মতাে নন্দগােপাল চলছে গুড়ি গুড়ি?
লুকিয়ে বুঝি মুখোসখানা রাখছে চুপি চুপি?
আজকে রাতে অন্ধকারে টেরটা পাবেন গুপী!
আয়না হাতে দাঁড়িয়ে গুপী হাসছে কেন খালি?
বিকট রকম পােশাক ক’রে মাখছে মুখে কালি!
এম্নি করে লম্ফ দিয়ে ভেংচি যখন দেবে
নন্দ কেমন আঁৎকে যাবে—হাসছে সে তাই ভেবে।
আঁধার রাতে পাতার ফাঁকে ভূতের মতন কেরে?
ফন্দি এঁটে নন্দগােপাল মুখােস মুখে ফেরে!
কোথায় গুপী, আসুক না সে ইদিক পানে ঘুরে–
নন্দদাদার হংকারে তার প্রাণটি যাবে উড়ে।
হােথায় কেরে মূর্তি ভীষণ মুখটি ভরা গোঁফে?
চিমটে হাতে জংলা গুপী বেড়ায় ঝাড়ে ঝােপে!
নন্দ যখন বাড়ির পথে আসবে গাছের আড়ে
“মার মার মার কাট রে” বলে পড়বে তাহার ঘাড়ে!
নন্দ চলেন এক পা দু পা আস্তে ধীরে গতি
টিপি টিপি চলেন গুপী সাবধানেতে অতি–
মােড়ের মুখে ঝােপের কাছে মারতে গিয়ে উঁকি
দুই সেয়ানে এক্কেবারে হঠাৎ মুখােমুখি!
নন্দ তখন ফন্দি ফাঁদন কোথায় গেল ভুলি
কোথায় গেল গুপীর মুখে মার মার মার বুলি!
নন্দ পড়েন দাঁতকপাটি মুখােস-টুখােস ছেড়ে
গুপীর গায়ে জ্বরটি এল কম্প দিয়ে তেড়ে।
গ্রামের লােকে দৌড়ে তখন বদ্যি আনে ডেকে
কেউ-বা নাচে কেউ-বা কাঁদে রকম-সকম দেখে।
নন্দ গুপীর মন্দ কপাল এগ্নি হ’ল শেষে
দেখলে তাদের লুটোপুটি সবাই মরে হেসে!
সন্দেশ(১৩২২)
।। সমাপ্তি।।