ঝালাপালা
(সুকুমার রায়)
।। পাত্রগণ।।
পণ্ডিতমশায়, ঘটিরাম ও কেষ্টা : ছাত্র, পুলিস, দুলিরাম ও খেঁটুরাম : জমিদারের মােসাহেব, কেবলচাঁদ : ওস্তাদ, রামকানাই : জমিদারের ভৃত্য, কেদারকৃষ্ণ : জমিদারের মামা, জুড়ির দল
।। প্রথম দৃশ্য।।
পণ্ডিতমশায়ের বাড়ি
জুড়ির প্রবেশ ও গান
সখের প্রাণ গড়ের মাঠ
ছাত্র দুটি করে পাঠ
পড়ায় নাই রে মন
সবাই হচ্ছে জ্বালাতন!
অতি ডেঁপাে দুকান কাটা
ছাত্র দুটি বেজায় জ্যাঠা
কাউকে নাহি মানে
সবাই ধরাে ওদের কানে!
গুরুমশাই টিকিওয়ালা
নিত্যি যাবেন ঝিঙেটোলা
জমিদারের বাড়ি–
সেথা আড্ডা জমে ভারি!
[জড়ির প্রস্থান]
পণ্ডিতের প্রবেশ
পণ্ডিত। (স্বগত) রোজ ভাবি জমিদার-মশাইকে বলে কয়ে তার বাড়িতেই একটা টোল বসাব। তা একটু নিরিবিলি যে কথাটা পাড়ব, সে আর হয়ে উঠল না। যে-সব বাঁদর জুটেছে, দুটো বাজে কথা বলবার কি আর জো আছে? এই জন্যেই বলি, ন্যায়শাস্ত্র যে পড়ে নি সে মানুষই নয়—সে গােরু, মর্কট!
নেপথ্যে ওস্তাদী গানের আওয়াজ
এই আবার চলল! এ এখন সারাদিন চলতে থাকবে! গলা তাে নয়, যেন ফাটা বাঁশ! গানের তাড়ায় পাড়াসুদ্ধ লোক ত্রাহি ত্রাহি কচ্ছে–কাগটা পর্যন্ত ছাতে বসতে ভরসা পায় না—অথচ ভাবখানা দেখায় এমনি, যেন গান শুনিয়ে আমাদের সাতচোন্দং তিপ্পান্ন পুরুষ উদ্ধার করে দিচ্ছে। আ মােলাে যা–
ঘটিরামের প্রবেশ
এত দেরি হল কেন? এতক্ষণ কি কচ্ছিলি?
🕸️ঘটিরাম। আজকে শিগগির-শিগগির ছুটি দিতে হবে।
🕸️পণ্ডিত। বটে! অনেক দিন পিঠে কিছু পড়ে নি বুঝি! ছুটি কিসের?
🕸️ঘটিরাম। তাও জানেন না! ও-পাড়ায় গানের মজলিস হবে যে! বড়-বড় ওস্তাদ–
🕸️পণ্ডিত। না, না, ছুটি পাবি নে, যা! পড়ার সঙ্গে সম্পক্ক নেই, এসেই ছুটির খোঁজ।
🕸️ঘটিরাম। বাঃ ঝিঙেটোলার জমিদারবাবু আসবেন!
🕸️পণ্ডিত। লাটসাহেব এলেও যেতে পাবি নে। কেষ্টা কোথায়!
🕸️ঘটিরাম। জানি নে। ডেকে আনব?—ওরে কেষ্টা!
[প্রস্থানােদ্যম]
পণ্ডিত। থাক্ থাক্, ডাকতে হবে না। ওখেনে বসে পড়্।
🕸️ঘটিরাম। ‘অল্ ওয়ার্ক্ অ্যান্ড্ নাে প্লে মেক্স্ জ্যাক্ এ ডাল্ বয়’–বালকদিগকে খেলিবার সুযোগ দেওয়া উচিত, কেন না, কেবলই লেখাপড়া করিলে মনের স্ফূর্তি নষ্ট হয়। হ্যাঁ, হ্যাঁ, বালকদিগকে খেলিবার সুযােগ দেওয়া উচিত, কেন না, কেবলই লেখাপড়া করিলে মনের স্ফূর্তি নষ্ট হয়—ফুর্তিটুর্তি সব মাটি। কেন না, কেবলই লেখাপড়া করিলে মনের স্ফূর্তি নষ্ট হয়–এই আমাদের যেমন হয়েছে। কেন না—
🕸️পণ্ডিত। ও-জায়গাটা পাঁচশােবার করে পড়তে হবে না। তাের অন্য পড়া নেই?–ঐ যে পুলিসটা যাচ্ছে! ওকে একটু ডাকা যাক। এই পাহারাওয়ালা, ইদিকে আও।
পুলিসের প্রবেশ
দেখাে, হামারা পাশের বাড়িমে দিনরাত ভর এইসা ক্যাঁচক্যাঁচ করতা, নিদ্রার অত্যন্ত ব্যাঘাত হােতা হায়। ইস্কো কুছ প্রতিকার হয় না রে ব্যাটা?
🕸️পুলিস। কেয়া বােলতা বাবু?
🕸️পণ্ডিত। আহা, এটা দেখি একেবারে নিরক্ষর মূর্খ! আরে, পাশের বাড়িমে একঠো গানের ওস্তাদ হায় নেই? উস্কো একদম কাণ্ডাকাণ্ড জ্ঞান নেহি হায়, দিন-রাত ভর্ কেবল সারে গামা ভাঁজতা হায়।
🕸️পুলিস। কেয়া হােতা?
🕸️পণ্ডিত। আরে, খেলে যা! (সুর করিয়া) সারে গাগা মাপা ধানি ধানি—এইসা কর্তা হায়।
🕸️পুলিস। হাম কেয়া করেগা বাবু? উ হমারা কাম নেহি।
🕸️পণ্ডিত। না, তােমার কাজ না! মাইনে খাবে তুমি, আর কাজ করবে বেচারাম তেলি!
🕸️পুলিস। হাঁ বাবু।
🕸️পণ্ডিত। চেঁচাস কাহে? ফের পূজোর বকশিশ চায়গা তাে এইসা উত্তম-মধ্যম দেগা, থোঁতামুখ ভোঁতা কর দেগা।
🕸️পুলিস। আরে, পাগলা হায় রে, পাগলা হায়!
[পুলিসের প্রস্থান]
পণ্ডিত। দেখ, ছোঁড়াটার আর সাড়াশব্দ নেই! ঘটে!
🕸️ঘটিরাম। অ্যাঁ–
🕸️পণ্ডিত। “অ্যা” কিরে বেয়াদব? আজ্ঞে বলতে পারিস নে? আধঘণ্টা ধরে ‘অ্যাঁ’ করতে লেগেছে! বলি, পড়ছিস না কেন?
🕸️ঘটিরাম। হ্যাঁ, পড়ছিলাম তাে।
🕸️পণ্ডিত। শুনতে পাই না কেন? চেঁচিয়ে পড়্।
🕸️ঘটিরাম। (চিৎকার করিয়া)
অন্ধকারে চৌরাশিটা নরকের কুণ্ড
তাহাতে ডুবায়ে ধরে পাতকীর মুণ্ড–
পণ্ডিত। থাক্, থাক্, অতো চেঁচাস নে, একেবারে কানের পােকা নড়িয়ে দিয়েছে।
কেষ্টার প্রবেশ
কেষ্টা। লেখাপড়া করে যেই গাড়িচাপা পড়ে সেই। শুনলুম আজকে ও-পাড়ায় গানের মজলিস হবে।
🕸️পণ্ডিত। এতক্ষণে পড়তে এসেছিস?
🕸️কেষ্টা। ‘আই গাে আপ্, ইউ গাে ডাউন’–সেই কখন এসেছি—এতক্ষণে কত পড়ে ফেললাম। আই গাে আপ, ইউ গাে ডাউন’–
🕸️পণ্ডিত। যা, যা, আমি যেন আর দেখি নি, কাল আসিস নি কেন?
🕸️কেষ্টা। কালকে কি করে আসব? ঝড় বৃষ্টি বজ্রাঘাত!
🕸️পণ্ডিত। ঝড় বৃষ্টি কিরে? কাল তাে দিব্যি পরিষ্কার ছিল।
🕸️কেষ্টা। আজ্ঞে, শুক্কুরবারের আকাশ, কিচ্ছু বিশ্বেস নেই। কখন কি হয়ে পড়ে!
🕸️পণ্ডিত। বটে! তাের বাড়ি কদ্দূর?
🕸️কেষ্টা। আজ্ঞে, ঐ তালতলায়। ‘আই গাে আপ্, ইউ গাে ডাউন।’ ‘আই গাে আপ্, ইউ গাে ডাউন’ মানে কি?
🕸️পণ্ডিত। ‘আই’—’আই’ কিনা চক্ষুঃ, ‘গাে’—গয়ে ওকারে গাে—গৌ গাবৌ গাবঃ, ইত্যমরঃ। ‘আপ’ কিনা আপঃ–সলিলং বারি অর্থাৎ জল। গােরুর চক্ষে জল, অর্থাৎ কিনা গােরু কাঁদিতেছে। কেন কান্দিতেছে? না ‘উই গাে ডাউন’, কিনা ‘উই’ অর্থাৎ যাকে বলে উইপােকা—’গো ডাউন’, অর্থাৎ গুদমখানা। গুদমঘরে উই ধরে আর কিছু রাখলে না, তাই না দেখে, ‘আই গাে আপ’–গােরু কেবলি কান্দিতেছে–
🕸️ঘটিরাম। (বিকট হাস্য)
🕸️পণ্ডিত। ঘটে!
🕸️ঘটিরাম। অ্যাঁ–না, আজ্ঞে–
🕸️পণ্ডিত। ফের ওরকম বিটকেল শব্দ করবিতাে পিটিয়ে সিধে করে দেব।
পণ্ডিতের নিদ্রাচেষ্টা
কেষ্টা। পণ্ডিতমশাই, ও পণ্ডিতমশাই–
🕸️ঘটিরাম। ঘুমুচ্ছে? (ঠেলিয়া) ও পণ্ডিতমশাই! কেষ্টা ডাকছে, কেষ্টা ডাকছে–
🕸️কেষ্টা। পণ্ডিতমশাই, এই জায়গাটা বুঝতে পাচ্ছি না।
🕸️পণ্ডিত। হুঁ, দেখি নিয়ে আয়, কোন জায়গাটা। সব বলে দিতে হবে! তােদের আর কিচ্ছু হবে না! ‘ওয়ান্স্ আই মেট্ এ লেম্ ম্যান্ ইন এ স্ট্রীট নিয়ার মাই হাউস্’। ‘ওয়ান্স্ আই মেট্ এ লেম্ ম্যান্’—কিনা একদা এক বাঘের গলায় হাড় ফুটিয়াছিল। ‘ইন এ স্ট্রীট’—সে বিস্তর চেষ্টা করিল। ‘নিয়ার মাই হাউস্’—কিন্তু সে হাড় বাহির হইল না। এই সােজা ইয়েটা বুঝতে পাল্লি না?(ঘটিরামের প্রতি) কি রে? পালাচ্ছিস যে!
🕸️ঘটিরাম। না, পালাচ্ছি না তাে! কেষ্টা এমনি গােলমাল কচ্ছে, কিচ্ছু আঁক কষতে পাচ্ছি না।
🕸️পণ্ডিত। কি আঁক দেখি নিয়ে আয়।
🕸️ঘটিরাম। আজ্ঞে এই যে! এই—চার সের আলুর দাম যদি দশ আনা হয় তবে আধ মণ পটলের দাম কত?
🕸️পণ্ডিত। দেখি, চার সের আলু দশ আনা তাে! তবে আধ মণ পটল—আহা, আবার পটল এল কোত্থেকে?
🕸️ঘটিরাম। তা তাে জানি না। বােধ হয় পটলডাঙা থেকে!
🕸️পণ্ডিত। দূৎ! একি একটা আঁক হতে পারে? গাধা কোথাকার!
🕸️ঘটিরাম।–তাই বলুন! আমি কত যােগ করলাম, ভাগ করলাম, শেষটায় জি-সি-এম্ পর্যন্ত করলাম, কিছুতেই হচ্ছিল না। বন্ড শক্ত, না?
🕸️পণ্ডিত। মেলা বকিস নে, যাঃ!
🕸️ঘটিরাম। যাবাে? ছুটি?
🕸️কেষ্টা। ছুটি–ছুটি–ছুটি–
🕸️পণ্ডিত। না, না, ছুটি-টুটি হবে না।
🕸️ঘটিরাম। হ্যাঁ ভাই, তুই সাক্ষী আছিস, বলেছেন যা।
🕸️কেষ্টা। হ্যাঁরে, আমাদের কিন্তু কোন দোষ নেই।
🕸️পণ্ডিত। দেখলে কাণ্ডটা! এই-সব হুজুকেই তাে ছেলেগুলােকে মাটি করলে! আর জমিদারমশাইয়ের আক্কেলটা দেখ—এখানে এসে অবধি দশভূতে তাকে পেয়ে বসেছে–দেখ দেখি, টাকা ওড়াবার জন্য শেষটায় কিনা গানের মজলিস! ছ্যা ছ্যা!
[পণ্ডিতের প্রস্থান]
জুড়ির প্রবেশ ও গান
সাবধান হয়ে সবে অবধান কর রে।
ওহে শিষ্য গুণধর কোলাহল ছাড় রে।।
(আহা) কেনা জানে চণ্ডীবাবু ঝিঙেটোলার জমিদার।
(আহা) অনুরক্ত ভক্ত মােরা চরণে প্রণমি তার।।
(ওসে) বিক্রমে বিক্রমাদিত্য সর্বশাস্ত্রে ধুরন্ধর।
(আহা) সাক্ষাৎ যেন দাতাকর্ণ দানব্রতে ভয়ঙ্কর।।
(এরা) খাচ্ছে দাচ্ছে ফুর্তি কচ্ছে নিত্য তারি কল্যাণে।
(সেথা) চব্বিশ ঘণ্টা মারছে আড্ডা বখশিশাদি সন্ধানে।।
(সেথা) নিত্য নতুন হচ্ছে হললা লােকারণ্য মারাত্মক।
(সেথা) বাদ্যের ঘটা খাদ্যের ঘটা অর্থের শ্রাদ্ধ অনর্থক।।
(আহা) একজন বড় সাদাসিধে ভেদ করে না আত্মপর।
(আর) টাকার লােভে বসে থাকে যত ব্যাটা স্বার্থপর।।
(ওরে) পণ্ডিতমশাই ব্যস্ত বড্ড চণ্ডীবাবুর হিতার্থ।
(দেখ) অন্নলুচি ধ্বংস করি কচ্ছেন সবায় কৃতার্থ।।
(আহা) বিদ্যে জাহির কচ্ছে সবাই পােলাও কোর্মা ভােজনে।
(দেখ) যত রাজ্যের নিষ্কম্মার দল বাড়ছে সবাই ওজনে।।
(ওরে) অবিশ্রান্ত হুজুক নিত্য মুহূর্তেকো শান্তি নেই।
(আজ) পঞ্চবর্ষ অন্ত হৈল ক্ষান্ত দেবার নামটি নেই।।
(ওরে) কস্মিনকালে শুনি নাই রে এমন কাণ্ডকারখানা।
(ওই) খােসামুদে ভণ্ডগুলাে আহ্লাদেতে আটখানা।।
(আহা) পুষ্পচন্দন বৃষ্টি হবে চণ্ডীবাবুর মস্তকে।
(দেখ) অক্ষয় পুণ্য সঞ্চয় হবে চিত্রগুপ্তের পুস্তকে।।
।। দ্বিতীয় দৃশ্য।।
জমিদার বাড়ি।
দুলিরাম ও খেঁটুরামের প্রবেশ
দুলিরাম। এত কাণ্ডকারখানা করা গেল, এখন ভালােরকম দু-একটা ওস্তাদ আসে তবে মজলিসটা জমে।
🕸️খেঁটুরাম। হ্যাঁ। বেশ তালে আছি দাদা! ভাবনা নেই, চিন্তা নেই, খাওদাও আর ফূর্তি কর।
🕸️দুলিরাম। হ্যাঁ হ্যাঁ, যেরকম ঘি-দুধ চর্বচোষ্য চলছে, আর কটা দিন যেতে দাও না—আর চেনবার জো থাকবে না।
কেবলচাঁদের প্রবেশ
কেবল। আমি মনে কচ্ছিলুম আপনাদের মজলিসে আজ গুটি দশেক গান শােনাব।
🕸️খেঁটুরাম ও দুলিরাম। (পরস্পরের প্রতি) এ কে রে?
🕸️কেবল। সিকী! আপনারা কেবলচাঁদ ওস্তাদকে চেনেন না?
🕸️খেঁটুরাম। কোন জন্মে নামও শুনি নি–
🕸️দুলিরাম। চোদ্দপুরুষে কেউ চেনে না–
🕸️কেবল। হ্যাঁ, তা আপনারা গােপীকেষ্টবাবুকে চেনেন তাে?
🕸️খেঁটুরাম। গােপীকেষ্ট?
🕸️দুলিরাম ও খেঁটুরাম। হ্যাঁ–নাম শুনেছি–বােধ হচ্ছে।
🕸️কেবল। আমি গােপীকেষ্টবাবুর বাড়িওয়ালার খুড়শ্বশুরের জামাইয়ের পিসতুতাে ভাই।
🕸️দুলিরাম। তাই নাকি।
🕸️খেঁটুরাম। সে কথা বলতে হয়—আসতে আজ্ঞা হােক মশাই।
🕸️দুলিরাম। বসতে আজ্ঞা হােক মশাই–
🕸️খেঁটুরাম। কি নামটা বললেন আপনার?
🕸️কেবল। কেবলচাঁদ।
🕸️দুলিরাম। কি বললে? বক্কেশ্বর? তা বেশ, বকদাদা, আজ তােমার গান শােনা যাবে।
🕸️কেবল। তা বেশ, কি বলেন—গানটা আরম্ভ করলে হয় না?
🕸️খেঁটুরাম। না, না! এখনই কি দরকার? সবাই আসুক আগে–
🕸️কেবল। এই সুর-টুরগুলাে একটু গুছিয়ে নিতে হবে।
🕸️দুলিরাম। আরে মশাই! আমাদের কাছে ‘গা’-ও যা, ‘ধা’-ও তাই–সবই সমান।
🕸️কেবল। হ্যাঁ–গানগুলাের কি মুশকিল জানেন? ওগুলাে আমার স্বরচিত কিনা–তাই, গাইতে একটু সংকোচ বােধ কচ্ছি।
🕸️খেঁটুরাম। তা নাই-বা গাইলে—অন্য কিছু গাও না–
🕸️কেবল। আ মােলাে যা! এরা আমায় গাইতে দেবে না দেখছি, আমার ভালাে-ভালাে। গানগুলাে–
কেষ্টা ও ঘটিয়ামের প্রবেশ
ঘটিরাম। আমরা গান শুনতে এলুম।
🕸️কেষ্টা। কই রে, লােকজন সব কই? গাইবে কে? আপনি বুঝি?
🕸️কেবল। হ্যাঁ হ্যাঁ, তা এঁরা যখন নেহাত পেড়াপীড়ি কচ্ছেন তখন না গাইলে সেটা ভয়ঙ্কর খারাপ দেখাবে।
কেবলচাঁদ গুন গুন করিতে-করিতে সহসা সপ্তমে চিৎকার
খেঁটুরাম। রক্ষে কর দাদা, এ অত্যাচার কেন?
🕸️দুলিরাম। মশাই, এটা ‘ডেফ্ অ্যান্ড ডাম্ব্’ ইস্কুল নয়–আমাদের কানগুলাে বেশ তাজা আছে।
🕸️কেবল। আজ্ঞে, সুরটা ঠিক আন্দাজ পাই নি—একটু চড়ে গিয়েছিল—না?
🕸️দুলিরাম। একটু বলে একটু?
🕸️খেঁটুরাম। রীতিমত তেড়ে এসেছিল।
🕸️কেবল। আচ্ছা, একটু নামিয়ে ধরি–
কেবলচাঁদের গান
আহা, পড়িয়া কালের ফেরে মােরা কি হনু রে?
কোথায় ভীষ্ম কোথা দ্রোণ
কোথা কর্ণ ভীমার্জুন।
কোথায় গেলেন যাজ্ঞবল্ক্য কোথায়-বা সে মনু রে?
মাটির সঙ্গে মিশছে সবি
কেঁচোর মতাে খাচ্ছে খাবি।
কেবল আপিস খাটি কচ্ছে মাটি নধরপুষ্ট তনু রে–
ব্রাহ্মণের সে তেজ নাই
হ্যাঁ হ্যাঁ ব্রাহ্মণের সে–
কেবলচাঁদের মাথা চুলকানাে
দুলিরাম। শিঙ নাই আর লেজ নাই–
🕸️কেবল। হ্যাঁ হ্যাঁ–
কেবলচাঁদের গান
ব্রাহ্মণের সে তেজ নাই
খাদ্যাখাদ্য ভেদ নাই
মনের দুঃখ কারে বলি মােরা কি হনু রে–
আহা পড়িয়া কালের ফেরে মােরা কি হনু রে।
খেঁটুরাম। দাঁড়ান একটু সামলে নি–অতো করুণ রস করবেন না।
খেঁটু ও দুলি ক্রন্দনােমুখ। কেষ্টা ও ঘটিরামের উচ্চহাস্য
খেঁটুরাম। তবে রে ছােকরা! তােরা হাসছিস কেন?
🕸️ঘটিরাম। বাঃ! হাসি পেলে হাসব না?
🕸️দুলিরাম। হাসি পাবে কেন? এখানে হাসবার কি হল?
🕸️খেঁটুরাম। ছ্যাবলামি পেয়েছিস? কথা নেই বার্তা নেই–হ্যাঃ-হ্যাঃ!
🕸️ঘটিরাম। কি রে কেষ্টা, হাসি পেলে হাসব না?
🕸️কেষ্টা। এই রে, পণ্ডিতমশাই আসছে–
🕸️ঘটিরাম ও কেষ্টা। এই রেঃ, এই রেঃ, এই রেঃ, পণ্ডিতমশাই আসছে—মাটিং চকার—তাের র্যাপারটা দে তাে।
ঘটিরাম ও কেষ্টার র্যাপার মুড়ি হইয়া উপবেশন।
পণ্ডিতের প্রবেশ
পণ্ডিত। ভালাে, ভালাে! তােমরা মধ্যেমধ্যে বিশ্রাম নিতে পার না? নিত্যিনিত্যি জমিদারমশাইকে বিরক্ত করাটা কি ভালাে দেখায়?—ইকী! ক্যাবলাটা এখানে এয়েছে কি করতে?(দুলিরাম ও খেঁটুরামের প্রতি) আমােলা যা! তােমাদের যত রাজ্যের ইয়ার-বকশী সব বুঝি জোটাচ্ছ একে-একে?
🕸️কেবল। দেখলেন মশায়? আমাকে অপমান কললে। আমায় ইয়ার-বকশী বললে, অমন কললে কিন্তু আমি গাইব না।
🕸️পন্ডিত। তা নাই-বা গাইলে—কে তােমাকে মাথার দিব্যি দিচ্ছে? যা না গান! গানের ধমকে আমাদের পর্যন্ত পিলে চমকে ওঠে–তা, অন্যে পরে কা কথা!
ভ্রাতা ও বিশাল পুঁটলি লইয়া রামকানাইয়ের প্রবেশ
রামকানাই। (ঘটিরাম ও কেষ্টার প্রতি) আপনাদের কি হয়েছে? অমন করে বসে আছেন যে? কাশি? জ্বর? ন্যাড়া মাথা : ঠাণ্ডা লাগবে বলে?
🕸️পণ্ডিত। (ঘটিরাম ও কেষ্টার প্রতি।) কি হে, এখানে এসে হাজির হয়েছ? আচ্ছা বেরিয়ে নাও তারপর–
রামকানাই কর্তৃক পণ্ডিতস্কন্ধে পুঁটলি স্থাপন
তুমি কি রকম মানুষ হে?
🕸️রামকানাই। কেন? বেশ দিব্যি মানুষটি।
🕸️পণ্ডিত। বলি চোখ দিয়ে দেখতে পাও না। কি?
🕸️রামকানাই। চোখ দিয়ে দেখতে পাই না তাে কি কান দিয়ে দেখতে পাই?
🕸️পণ্ডিত। না হে, তুমি বড় বাচাল-শাস্ত্রে বলেছে–
🕸️রামকানাই। না–শাস্ত্রে আমার সম্বন্ধে কিছু বলে নি–
🕸️পণ্ডিত। আহা, বলি, তােমায় তাে কেউ এখেনে ডাকে নি?
🕸️রামকানাই। ডাকবে আবার কি? এ কি নিলেমের মাল পেয়েছ যে ডাকাডাকি করবে?
🕸️পণ্ডিত। হ্যাঁ, তবে অমন করে বসে থাকলে তাে ভালাে দেখায় না।
🕸️রামকানাই। ভালাে দেখায় না কি হে? তোমাকে যে অশথগাছের মামদো ভূতের মতাে দেখা যায়, সে বেলা কি?
🕸️পণ্ডিত। আহা, বলি, যদি কিছু বলবার থাকে, তা ঝটপট বলে বাড়ি যাও-না কেন?
🕸️রামকানাই। হ্যাঁ, তাহলে তুমিও আমার পুঁটলিটা সরাবার সুবিধা পাও।
🕸️পণ্ডিত। কি আপদ! বলি পুঁটলিটা রেখে যেতে বললে কে? নিয়েই যাও-না কেন?
🕸️রামকানাই। মুটের পয়সা দেবে কে?
🕸️পণ্ডিত। হাঁঃ—মুটের পয়সা দেবে কে? মুটের পয়সা দেবে!
🕸️রামকানাই। উঃ! দুৎ! তােমার ময়লা চাদরটা আমার নাকের কাছে নেড়াে না।
জমিদারের প্রবেশ
খেঁটুরাম। সর সর, জমিদারমশাই আসছেন।
🕸️দুলিরাম। হ্যাঁ, হ্যাঁ, সর, সর।
🕸️জমিদার। কি রে! রামা কখন এলি : বেশ, বেশ, ভালো আছিস তো?
🕸️রামকানাই। (প্রণাম করিয়া) আজ্ঞে এই মাত্র আসছি–
🕸️পণ্ডিত। আপনার এই লােকটা ভারি উদ্ধতস্বভাব–কথা বলে যেন তেড়ে মারতে আসে।
🕸️জমিদার। ওরে রামা! বাবুদের কিছু বলিসটলিস নে।
🕸️রামকানাই। যে আজ্ঞে।
🕸️জমিদার। ও আমার বহুকেলে পুরােনাে চাকর কিনা–কারুর কথা-টথা বড় শােনে না। তবে লােকটা ভালো-দেশে গিছিল, আজ বহুকাল পরে এল।
🕸️খেঁটুরাম। ইনি হচ্ছেন কেবলচাঁদ ওস্তাদ–
🕸️দুলিরাম। মস্ত গাইয়ে।
🕸️খেঁটুরাম। আশ্চর্য! যত ওস্তাদ এসেছিল, ওঁর চেহারা দেখেই দে চম্পট।
🕸️দুলিরাম। তা হবে না?এঁরই গান শুনে আমাদের নবাবসাহেব মুর্ছো গেছিলেন, এঁরই গান শুনবার জন্য কিষাণবাবু তেতাল্লিশ মাইল পথ হেঁটে গেছিলেন–
🕸️খেঁটুরাম। এঁকে সভায় রাখতে কত রাজা বাদশা হদ্দ হল।
🕸️দুলিরাম। কত টাকাকড়ির শ্রাদ্ধ হল।
🕸️খেঁটুরাম। কত ওস্তাদ গাইয়ে জব্দ হল।
🕸️পণ্ডিত। ওহে, বেশি বাড়িয়ে কাজ কি? আমাদের ন্যায়শাস্ত্রে বলেছে—অলমতিবিস্তরেন–বেশি বাড়াতে নেই।
🕸️খেঁটুরাম। আমি অনেক হাঙ্গামা করে তবে ওঁকে এনেছি।
🕸️দুলিরাম। তুই এনেছিস? দেখলেন মশাইরা, কাজ করব আমি, আর বাহাদুরি নেবেন উনি!
🕸️খেঁটুরাম। খবরদার!
🕸️দুলিরাম। চোপরও!
🕸️খেঁটুরাম। ফের!
🕸️পণ্ডিত। সমাশ্বসীহি, সমাশ্বসীহি, জমিদারমশায়ের সামনে এমন গর্হিত আচরণ করতে নেই! আহা! সঙ্গীতশাস্ত্র-রসানভিজ্ঞ, সঙ্গীত আর ন্যায়শাস্ত্র বুঝলেন কিনা–অতি উপাদেয় জিনিস! আমাদের ন্যায়শাস্ত্রে বলেছে—অদ্ভুত-তম্ভাবে চব্বী সে এক অত্যদ্ভুদ্ ব্যাপার–
🕸️জমিদার। তাহলে গান আরম্ভ হােক। ওস্তাদজি আপনি মাঝে-মাঝে আমাদের গান-টান শােনাবেন–
🕸️কেবল। হ্যাঁ, তা, শােনাব বৈকি–অবিশ্যি এর দরুন আমার সব কাজকর্মের বড্ড ভয়ঙ্কর ক্ষেতি হবে, কিন্তু তা হােক–
🕸️পণ্ডিত। আরে ছো, ছো! তুমি তাে ভারি ছােটলােক হে। এই সামান্য কাজটুকু করতেও তােমাদের যত রাজ্যের আপত্তি! আজ যদি জমিদারমশাই আদেশ করেন, এখেনে একটা টোল খুলতে হবে–আমার একশাে কাজ থাক, হাজার কাজ থাক, আমি অমনি টোল খুলতে লেগে যাব। কেন? না, এটা আমাদের কর্তব্য। আমাদের উচিত যে ওঁর খাতিরে কিছু ত্যাগ স্বীকার করি, হােকগে ক্ষেতি, তাতে কি? বিশ্বাস হচ্ছে না? রামা! যাও তাে, এখুনি একটা লােক পাঠিয়ে আমার জিনিসগুলাে ধাঁ করে আনিয়ে দাও তাে–চণ্ডী জমিদারমশায়ের সম্মান রাখতেই হবে।
🕸️জমিদার। কিন্তু এখেনে জায়গার যে বড় অসুবিধে–
🕸️পণ্ডিত। কিচ্ছু না, কিচ্ছু না—ওর মধ্যেই সুবিধা করে নেব। বুঝলেন চণ্ডীবাবু, আপনি আমার জন্যে চিন্তিত হবেন না। রামা!
🕸️রামকানাই। আবার কেন?
🕸️পণ্ডিত। ঐ বাইরের বড় ঘরটায় আমার বন্দোবস্ত করে দাও তাে।
🕸️রামকানাই। সেখেনে দেখলুম দুটি বাবু বসে আছেন।
🕸️দুলিরাম। হ্যাঁ, হ্যাঁ, আমার গাঁয়ের লােক। আপনার বাগানটা দেখলুম নষ্ট হয়ে যাচ্ছে–তাই ওদের বলে কয়ে এনেছি; ওরা এ বিষয়ে একেবারে এক্স্পার্ট। মাইনের জন্য ভাববেন না—পঞ্চাশ টাকা দিলেই হবে।
🕸️পণ্ডিত। যা! বাবুদের হটিয়ে দে। বলগে ওখেনে টোল বসবে।
🕸️দুলিরাম। সিকী! আমার গাঁয়ের লােক! হবুগ্রামের অপমান!
🕸️পণ্ডিত। আরে না, না– রামা, দেখিস যেন বাবুদের ধমক-ধামক করিস নে—জমিদারমশায়ের যাতে অখ্যাতি না হয়—মিষ্টি করে বলবি। আর দেখ্(গলা নামাইয়া) নেহাত যদি না শােনে ঘাড়ে ধাক্কা দিয়ে দিস।
🕸️খেঁটুরাম। শােন্–ঘর-টর দিয়ে কাজ নেই–জিনিসপত্রগুলাে এনে উঠোনে ফেলে রাখিস–
🕸️পণ্ডিত। আর দেখ্—ঐ শব্দকল্পদ্রুমখানা আনতে ভুল হয় না যেন—আর কয়েকখানা মূল্যবান বই আছে—
🕸️দুলিরাম। যেমন কথামালা ধারাপাত–
🕸️পণ্ডিত। সেগুলাে হারায় না যেন–
🕸️কেবল। হ্যাঁ—সেই গানের কথাটা চাপা পড়ে গেল–
🕸️রামকানাই। হ্যাঁ, হ্যাঁ, গানটা হয়ে যাক–তারপর যাব এখন।
🕸️কেবল। এখানে বাজিয়ে কেউ নেই?
🕸️রামকানাই। আমি বাজাতে পারি—দাও তাে পাখওয়াজটা–ধত্তেরে কেটে তাগ ঘ্ড়ান্ ঘ্ড়ান্ নাগে নাগে নাগে নাগে–নাগে দেৎ ঘেঘে তেটে ঘেঘে তেটে ঘেঘে তেটে–কই! গান আসছে না বুঝি?
🕸️পণ্ডিত। ইকী! চাকরটা এরকম করে কেন?
🕸️জমিদার। পুরােনাে লােক কিনা! রামা তুই এখন চুপ কর–বাবুদের বাধা দিস নে। রামকানাই। যে আজ্ঞে!
কেবলচাঁদের গান
তানানা তাইরে নারে–তারে না তাইরে নারে–তারে না তাইরে নাইরে–না-তানান্না–
🕸️রামকানাই। এই যা! তাল কেটে গেল!
🕸️কেবল। আর কেন? থামাে না বাপু!
🕸️রামকানাই। কেন মশাই? থামব কেন? নাগেদেৎ ঘেঘেতেটে ঘেঘেতেটে ঘেড়ে নাগ তেরে কেটে দেৎ–দ্রেগে দ্রেগে দ্রেগে—
🕸️পণ্ডিত। ওহে, জমিদারমশায়ের সামনে অমন করতে নেই—আমাদের ন্যায়শাস্ত্রে বলেছে—ণত্বমিচ্ছন্তি বর্বরাঃ–বুঝলে কিনা।
🕸️জমিদার। রামা, তুই একটু কাজে যা–পুরােনাে মানুষ কিনা!
🕸️দুলিরাম। হ্যাঁ, ওস্তাদজি—ঐ যে গাইলেন ওটা কি তাল বলছিলেন?
🕸️কেবল। ওটা–ওটা হচ্ছে মান্দ্রাজী একতালা।
🕸️খেঁটুরাম। সবে একতালা? আহা, যখন চৌতালায় উঠবে–তখন না জানি কেমন হবে!
🕸️রামকানাই। তখন সব কানে তালা লেগে যাবে।
🕸️পণ্ডিত। হ্যাঁ ওস্তাদজি, তাহলে আপনার গানটা শিগ্গির শেষ করে ফেলুন–আহা, অতি উচ্চাঙ্গের সংগীত।
🕸️রামকানাই। ভারি উচ্চাঙ্গ! সেই আমাদের একজন যা ইমনকল্যাণের আলাপ করেছিল –সেটা পুরােপুরি শিখতে পারি নি। যেটুকু শিখেছি শুনবেন? আ–আ–আ–কেউ কেউ কেউ।
🕸️জমিদার। রামা!
🕸️রামকানাই। যে আজ্ঞে।
[রামকানাইয়ের শ্বার পর্যন্ত প্রস্থান]
কেবলচাঁদের গান
কেবল। হায় রে সােনার ভারত–
ঘটি ও কেষ্টার উচ্চহাস্য
ঘটিরাম। হাসিয়ে দিলি যে?
🕸️কেষ্টা। হাসিয়ে দিচ্ছিস কেন রে?
🕸️ঘটিরাম। তুই তাে আগে হাসছিলি–
🕸️কেষ্টা। যাঃ! আমি কখন হাসলাম–
🕸️কেবল। দেখলেন মশায়! গম্ভীর বিষয়, এর মধ্যে কি কাণ্ডটা কললে!
🕸️খেঁটুরাম। রামা! একে সটাং রাস্তা পার করে দিয়ে আয় তাে–
🕸️রামকানাই। (ওস্তাদকে ধরিয়া) একে?
[ঘটিরাম ও কেষ্টার প্রস্থান]
কেবল। এইও, ইস্টুপিট বেয়াদোব, ভদ্রলােকের গায়ে হাত তুলিস্!
🕸️পণ্ডিত। ইকী! ইকী! কাকস্য পরিবেদনা, গতস্য শােচনা নাস্তিক!
🕸️জমিদার। রামা, তুই একটু কাজে যা দেখি–তুই আমার নাম ডােবাবি দেখছি।
[রামকানাইয়ের প্রস্থান]
কেবলচাঁদের আবার গান আরম্ভ
কেবল। হায় রে সােনার ভারত দুর্দশাগ্রস্ত হইল
অবসাদ হিমে ডুবিয়ে ডুবিয়ে ধূলায় পতিত রইল
যে দেশের শ্রেষ্ঠতার এত সব ভূরি ভূরি প্রমাণ বর্তমান
আজকাল তাকেই কিনা—সব অবজ্ঞা করিতেছে—
এবং দেখাচ্ছে সবাই মর্তমান
কোথা সেই তিরিশ কোটি আটানব্বই লক্ষ
সাড়ে চোদ্দ হাজার মাতৃভক্ত ভারত সন্তান
সহ্য হবে না হবে না তাদের হৃদয়ে
সবাই জাগাে জাগাে উঠে পড়ে লাগাে
দেশােদ্ধারে ব্রতী হও হে!
দুলিরাম। এই! সিডিশাস্!
🕸️পণ্ডিত। অ্যাঁ, কি বললে? রাজদ্রোহসূচক? অ্যাঁ?
🕸️খেঁটুরাম। তবে রে! সিডিশাস্ গান কচ্ছিস কেন রে?
🕸️দুলিরাম। জানিস, আমার মামাতাে ভাই গবর্মেন্টের চাকরি করে।
🕸️খেঁটুরাম। হ্যাঁরে, ওর মামাতো ভাইয়ের চাকরি ঘােচাবি কেন রে?
🕸️কেবল। আমি তাে জানতুম নে–আমি তো জানতুম নে–
🕸️পণ্ডিত। জানতি নে কিরে? কেন জানতি নে?
পণ্ডিতের কেবলচাঁদকে প্রহার
কেবল। কী! মারলি কেন রে? ফের মার দেখি!
পণ্ডিতের কেবলচাঁদকে পুনঃপ্রহার
এবার মারবি তাে একেবারে–
পণ্ডিতের কেবলচাঁদকে পুনঃপ্রহার
উঃ! এত জোরে মারলি কেন রে ইস্টুপিট! দাঁড়া দেখাচ্ছি–
[কেবলচাঁদের পলায়ন]
পণ্ডিত। যা না গাইলেন! গলা শুনলে ছত্রিশ রাগিণী ছুটে পালায়।
🕸️দুলিরাম। ওর পেটের মধ্যে ডুবুরি নামালে, গানের ‘গ’টা মেলে কিনা সন্দেহ!
🕸️পণ্ডিত। তােমরা কোত্থেকে এ-সব আপদ জোটাও হে? জমিদারমশায়ের খ্যাতি প্রতিপত্তির দিকে কি তােমাদের একটুও দৃষ্টি নেই?
🕸️খেঁটুরাম। এই দুলিরামটাই তাে যত নষ্টের গােড়া, যত রাজ্যের অঘামারা রােথাে লােক ডেকে আনবে!
🕸️দুলিরাম। বিলক্ষণ। আমি ডেকে আনলাম? আমার সাতজন্মে ওর সঙ্গে আলাপ নেই।
🕸️খেঁটুরাম। এত করে বারণ কল্লুম, তবু ডেকে আনলে!
🕸️দুলিরাম। না, মশাই! ও নিজে ডেকে এনেছে আমি আদবে কিছু জানি নে!
🕸️পণ্ডিত। জানাে না তো জানো না–তা অত গরম হবার দরকার কি? আমাদের ন্যায়শাস্ত্রে বলেছে .. উষ্ণত্বমপ্ন্যাতপসং-প্রয়ােগাৎ–
🕸️জমিদার। এবারে গরমটা কেমন টের পাচ্ছ বল দেখি—
🕸️খেঁটুরাম। আঃ! গরম বলে গরম! আগুন লাগে কোথা! উঃ!
🕸️দুলিরাম। আমাদের বেড়ালটা সর্দি-গর্মি হয়ে মারা গেছে–
🕸️জমিদার। এ-সব বােধ হয় সেই ধূমকেতুর জন্যে–
🕸️পণ্ডিত। হ্যাঁ, সিদিন আমাদের ওখেনে ধূমকেতুর ন্যাজ দেখা গিছিল–
🕸️দুলিরাম। কার ন্যাজ কে জানে?
🕸️খেঁটুরাম। ওঁরই ন্যাজ হয়তাে।
🕸️জমিদার। ধূমকেতুটা এসে কি কাণ্ডই কল্ল। ঝড়, বৃষ্টি, ভূমিকম্প–
🕸️খেঁটুরাম। প্লেগ, দুর্ভিক্ষ, বেরিবেরি–
🕸️দুলিরাম। পানের পােকা, এলাহাবাদ একজিবিশান!
🕸️পণ্ডিত। আমি শুনেছি ঐ পানের পােকার খবরটা নাকি সত্যি নয়!
🕸️খেঁটুরাম। আলবাৎ সত্যি! নন্দলাল ডাক্তার স্বচক্ষে দেখেছে লােকে পান খাচ্ছে আর মরছে!
🕸️জমিদার। ঈস্! বল কি হে? তাহলে তাে কথাটা সত্যি বলতে হবে।
🕸️পণ্ডিত। হ্যাঁ—দূরবীণ দিয়ে সে পােকা দেখা গেছে–
🕸️খেঁটুরাম। কলকেতার সায়েব ডাক্তার বলেছে তার ভয়ঙ্কর তেজাল বিষ।
🕸️দুলিরাম। হ্যাঁ—আমি দেখিছি, সাদা মতন আবার ন্যাজ আছে। কার ন্যাজ কে জানে?
রামকানাইয়ের দ্রুত প্রবেশ
রামকানাই। এই রে সেই দাড়িওয়ালা! সেই দাড়িওয়ালা বাবুটা আমায় তেড়ে এসেছিল! উঃ!
🕸️পণ্ডিত। সিকী রে! তুই করেছিলি কি?
🕸️রামকানাই। আমি তো কিচ্ছু করি নি–আমি বললুম, এখেনে ঢােল বসবে, বাবুরা যদি একটু অন্যত্তর যান, নেহাত যদি না যান, আপনাদের ঘাড়ে ধাক্কা দেওয়া হবে।
🕸️দুলিরাম। কি। ভদ্রলােককে এমনি করে ইনসাল্ট্!
🕸️খেঁটুরাম। যত বড় মুখ নয় তত বড় কথা!
🕸️রামকানাই। আমি তাে মিষ্টি করে বলেছিলুম–
🕸️খেঁটুরাম। ব্যাটা, তােমায় মিষ্টি জুতাে না দিলে তুমি সিধে হবে না–
🕸️পণ্ডিত। আমার জিনিসপত্রগুলাে কি কল্লি?
🕸️রামকানাই। ঐ যে, বাইরের উঠোনে ফেলে রেখেছি!
🕸️পণ্ডিত। দেখলেন মশাই, কাণ্ডটা দেখলেন?
🕸️রামকানাই। এই বাবুটি যে বললেন!
🕸️পণ্ডিত। যা, যা, যেখানে হয় শিগ্গির বন্দোবস্ত করে দে! আমাদের ন্যায়শাস্ত্রে এক জায়গায় এমনি লিখেছে—
🕸️রামকানাই। বলি ন্যায়শাস্ত্র শুনলে তাে আর পেট ভরবে না! তােমরা কি এইখেনে বসেই রাত কাবার করবে নাকি? জমিদারমশায়ের কি আর খাওয়া-দাওয়া নেই?
🕸️জমিদার। ওরে রামা, অমন করে বলতে নেই—বাবুদের মান্য করে কথা বলিস–আর পণ্ডিতমশাইকে কি চোখ রাঙায়?
🕸️রামাকানাই। যে আজ্ঞে, প্রাতঃ প্রণাম পণ্ডিতমশাই!
🕸️পণ্ডিত। রামা, নেতাইবাবুর বাড়ি আমার দুই পােড়ো থাকে, তাদের খবর দিস তাে।
[পণ্ডিত, খেঁটুরাম ও দুলিরামের প্রস্থান]
জমিদার। রামা, দেখছিস তাে কাণ্ডটা?
🕸️রামকানাই। আজ্ঞে হ্যাঁ–
🕸️জমিদার। উৎপাত যে বেড়ে চলল–কি করা
🕸️রামকানাই। আজ্ঞে, হুকুম পেলেই সব সাফ করে দি।
🕸️জমিদার। না, না, ওরা আপনা থেকে উঠে যায়, এমন কিছু করা যায় না? অথচ আমার নিন্দেটা না হয়!
🕸️রামকানাই। তাহলে ওদের ঘরে লঙ্কার ধোঁয়া দিলে হয় না?
🕸️জমিদার। দুৎ! এটাকে কিছু জিগগেস করাই ঝকমারি! যা, তুই এক কাজ কর–আমার মামার বাড়ি যা। সেখেন থেকে কেদারমামাকে ডেকে আনবি–তাকে সব বলে কয়ে আনিস!
🕸️রামকানাই। যে আজ্ঞে–
🕸️জমিদার। মামা এলেই সব সিধে করে দেবে–উকিলে বুদ্ধি কিনা!
গান
নাছােড়বান্দা নড়েন না!
উড়ে আসেন, জুড়ে বসেন,
মাথায় কেন চড়েন না!
নাছােড়বান্দা নড়েন না!
যাবার নামটি করেন না,
ধাক্কা দিলে সরেন না!
নাছােড়বান্দা নড়েন না!
কচ্ছে সবাই যা’চ্ছা তাই!
চাকর ব্যাটা দিচ্ছে গালি,
হাঁ করে সব খাচ্ছে তাই!
কচ্ছে সবাই যা’চ্ছা তাই
আসছে যে-কেউ পাচ্ছে ঠাঁই,
ইকিরকম হচ্ছে ভাই?
কচ্ছে সবাই যা’চ্ছা তাই!
।। তৃতীয় দৃশ্য।।
জমিদার বাড়ি
কেদারকৃষ্ণ, জমিদার ও রামকানাই
কেদার। ডােন্ট্ পরওয়ার ভাগ্নে। আমি সব ঠিক করে দিচ্ছি। তুমি বড় জোর দুটো দিন গা ঢাকা দিয়ে থাক। রামা!
🕸️রামকানাই। আজ্ঞে–
🕸️কেদার। তুই মেলা বুদ্ধি খরচ করিস নে–যা বলব তাই করে যাবি। আগে আমার বইগুলাে আর খাতা পেনসিলটে বার করে রাখ।
[রামকানাইয়ের প্রস্থান।]
ভাগ্নে, তুমি নাকে সরষের তেল দিয়ে ঘুমােও গিয়ে, আমি সব সাবাড় করে দিচ্ছি–কিছু গােল-টোল বাধলে সব দোষ আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দিও–আমায় গাল দিয়ে একেবারে ভূত ছাড়িয়ে দিও।
[উভয়ের প্রস্থান]
পণ্ডিত ও দুলিরামের প্রবেশ
পণ্ডিত। হ্যাঁ দেখ, কাল জমিদারমশাই বড় আপসােস কচ্ছিলেন–বলছিলেন, এই খেঁটুরামের উৎপাতে তাঁর আর সােয়াস্তি নেই–ওকে যত শিগ্গির পার অর্ধচন্দ্র দিয়ে বিদায় করে দাও—আমাদের ন্যায়শাস্ত্রে বলেছে, প্রহারেণ ধনঞ্জয়ঃ–বুঝল কি না?
🕸️দুলিরাম। হ্যাঁ, এ আর একটা মুশকিল কি? এক্ষুণি ঘাড় ধরে–
খেঁটুরামের প্রবেশ
দাঁড়ান আমার গাঁয়ের লােক দুটোকে ডেকে আনি।
[দুলিরামের প্রস্থান]
পন্ডিত। হ্যাঁ দেখ, কাল জমিদারমশাই যা চটেছেন দুলিরামের ওপর–কী বলব! দেখ, শেষটায় ওর জন্যেই তােমাদের সক্কলের অন্ন মারা যাবে। ওকে যদি তাড়াতে পার, আঃ–জমিদারমশাই যা খুশি হবেন!
🕸️খেঁটুরাম। ব্যস্ত হচ্ছেন কেন? সব কয়টাকে ভাগিয়ে দিচ্ছি, (স্বগত) তােমাকে সুদ্ধু।
🕸️পন্ডিত। আর তােমার নিন্দেটা যা করে, কী বলব–এইমাত্র তোমার নামে যা নয় তা বলে গেল।
দুলিরামের প্রবেশ
রামা! ওরে রামারে! ঝট করে দুটো পান দিয়ে যা তো–রামাটা গেল কোথায়? ওহে, রামাকে একটু ডেকে দাও তাে।
🕸️খেঁটুরাম। না রে, ডাকিস নে।
🕸️দুলিরাম। রামা!–হয়তো বাড়ি নেই।
🕸️খেঁটুরাম। রামাটা ভারি দুষ্টু! এতক্ষণ হয়তাে ছিল, যেই আপনি ডেকেছেন, অমনি হয়তাে পালিয়েছে।
🕸️দুলিরাম। হয়তো অসুখ-টসুখ করেছে।
🕸️পণ্ডিত। তােমরা হয়তাে-হয়তাে করেই সব সারলে দেখছি! রামারে!
রামকানাইয়ের প্রবেশ
রামা, জমিদারমশাই নীচে নামলে একটু খবর দিস তাে, আমার একটু নিরিবিলি কথা আছে।
🕸️খেঁটুরাম। আ মােলাে যা! আমারও নিরিবিলি কথা আছে।
🕸️দুলিরাম। আমারও আছে–
🕸️রামকানাই। তােমরা বসে-বসে ভেরেণ্ডা ভাজো, তিনি আজ নীচে নামছেন না—তাঁর মামা এসেছেন যে! তাঁকে কিন্তু তােমরা চটিও না, ভারি বদমেজাজ আর রগচটা–এই যে তিনি আসছেন—আসুন, আসুন ইনিই কেদারকেষ্টবাবু, জমিদারমশায়ের মামা!
সকলের অভিবাদন
পণ্ডিত। আসুন, আসুন–আমাদের ন্যায় শাস্ত্রে বলেছে নরানাং মাতুলক্রমঃ। আপনার ভাগ্নেটি—আহা! অতি চমৎকার লােক। আমাদের ন্যায়শাস্ত্রে বলেছে–
🕸️দুলিরাম। নাঃ! আবার ন্যায়শাস্ত্র শুরু করল।
🕸️খেঁটুরাম। চল আমরা একটু ঘুরে আসিগে।
🕸️কেদার। এই লােক দুটোর চেহারা তাে বড় সুবিধের নয়–
🕸️পণ্ডিত। তা সুবিধের হবে কোত্থেকে—হাজার হােক ছোটলােক। আমাদের ন্যায়শাস্ত্রে বলেছে–মিষ্টান্নমিতরে জনাঃ। আপনার ভাগ্নে তাে কাউকে কিছু বলেন না—তাই ওরা আস্কারা পেয়ে গেছে। এমনি বেয়াদবী করে–কি বলব।
🕸️কেদার। বটে! তা আপনারা প্রতিকার করেন না কেন?
🕸️পণ্ডিত। কি করি বলুন? আপনারা থাকতে আমার তাে কিছু বলা উচিত হয় না।
🕸️কেদার। এক কাজ করুন, এর পর যদি কিছু বাড়াবাড়ি করে, ঘাড়টি ধরে বার করে দেবেন।
🕸️পণ্ডিত। হ্যাঁ, হ্যাঁ, তাই তাে করা উচিত। আমাদের ন্যায়শাস্ত্রে বলেছে–যা শত্রু পরে পরে।
🕸️কেদার। আহা আপনার সঙ্গে কথা কয়েও সুখ আছে—কি পাণ্ডিত্য! আবার কি মিষ্ট স্বভাব! আমার এই ক’টা লেখা আছে, এগুলাে আপনাকে একটু শােনাই—এমন সমজদার নােক তাে আর সচরাচর জোটে না!
কেদারকৃষ্ণের পাঠ
অমানিশার গভীর তমসাজাল ভেদ করিয়া ঐ পূর্বদিকে তরুণ তপন ধীরে-ধীরে উঁকি মারছ। বিহঙ্গের কলকল্লোলে, শিশিরসিক্ত বায়ুর হিল্লোলে দিগদিগন্ত আমােদিত মুখরিত উচ্ছ্বসিত হইয়া, আহা, স্বভাবের সেই শােভা ভারি চমৎকার হয়েছে! হে নিদ্রিত মানব সকল! ঐ শুনাে বাছুরগুলি ল্যাজ তুলিয়া হাম্বা-হাম্বা রবে ছুটিতেছে, তােমরা উত্তিণ্ঠত জাগ্রত। আহা, কবিরা তাে সত্যই বলিয়াছেন, ‘পাখি সব করে রব রাতি পােহাইল’–
🕸️পণ্ডিত। চমৎকার হয়েছে! আমার একটু কাজ আছে–এক্ষুনি যেতে হবে।
🕸️কেদার। একটু দাঁড়ান, এই জায়গাটা ভারি ইন্টারেস্টিং :
কেদারকৃষ্ণের পুনরায় পাঠ
দিন নেই, রাত নেই, সকাল নেই, বিকাল নেই, রোদ নেই, বৃষ্টি নেই, শীত নেই, গ্রীষ্ম নেই–কেবল সেই এক কথা, সেই এক চিন্তা, সেই এক কল্পনা, এক জল্পনা, এক তন্ত্র, এক মন্ত্র।–কেমন?—সমুদ্রের ফেনিলাম্বুরাশি নীলাম্বরাভিমুখে নৃত্য করিতে-করিতে নিত্য নবােৎসাহে–কেমন? ভাষার কেমন একটা সহজ ভঙ্গি আছে সেইটা লক্ষ্য করেছেন?–সমুদ্রের ফেনিলাম্বুরাশি নীলাম্বরাভিমুখে নৃত্য করিতে-করিতে নিত্য নবােৎসাহে সেই একই সুর, সেই একই ছন্দ, সেই একই সঙ্গীতকে ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত করিয়া তুলিতেছে—তাহার শেষ নাই, অন্ত নাই, বিরাম নাই, বিশ্রাম নাই, ক্ষান্তি নাই, বিচ্ছেদ নাই–
🕸️পণ্ডিত। দাঁড়ান, আমার বড় তাড়াতাড়ি–ধাঁ করে এক্ষুনি আসব।
[পণ্ডিতের প্রস্থান]
কেদার। হ্যাঁ, একেবারে ব্রহ্মাস্ত্র ঝেড়ে দিয়েছি—আচ্ছা, আবার ঘুরে আসুক–হাড় জ্বলিয়ে ছাড়ব!
[কেদারকৃষ্ণের প্রস্থান]
নেপথ্যে খেঁটুরাম ও দুলিরামের কণ্ঠস্বর
খেঁটুরাম। দেখ, চোরের দশদিন আর সাধুর একদিন।
🕸️দুলিরাম। হ্যাঁ, হ্যাঁ, তুই তাে সবই করবি, যা! যা!
খেঁটুরাম ও দুলিরামের প্রবেশ
খেঁটুরাম। দেখ, মেলা চালাকি করিস নে, কিছু বলি নে বলে?
🕸️দুলিরাম। একদিন ধরে এইসা পিট্টি দেব–
🕸️খেঁটুরাম। দেখ এ-সব আমি পছন্দ করি না কিন্তু–
🕸️দুলিরাম। দাঁড়া, আমার গাঁয়ের লােক দুটোকে ডেকে আনছি–
পণ্ডিতের প্রবেশ
পণ্ডিত। (দুলির প্রতি) ওহে, হস্ত থাকিতে কেন মুখে কথা বল, ঘা দু-চার লাগিয়ে দেও না–
খেঁটুরাম ও দুলিরামের লড়াই—পণ্ডিতের বাধা প্রদান
অ্যাঁ! মারামারি কচ্ছ? এক্ষুনি ঘাড় ধরে বের করে দেব।
🕸️খেঁটুরাম। কি! উড়ে এসে জুড়ে বসেছেন, আবার কথার ভঙ্গি দেখ।
🕸️দুলিরাম। ঘাড় ধরবে? আমার গাঁয়ের লােকদুটো গেল কোথায়?
🕸️পণ্ডিত। তােমাকে বলি নি তাে! তােমাকে বলি নি!
🕸️খেঁটুরাম। তবে আমাকে বলেছ?
খেঁটুরামের পণ্ডিতকে প্রহার
পণ্ডিত। ইকী! উঃ! ওরে রামা! রামারে! শিগগির ছুটে আয়, ওহে, উঃ! দেখ, আমাদের ন্যায়শাস্ত্রে বলেছে—উঃ!
কেদারকৃষ্ণ ও রামকানাইয়ের প্রবেশ
রামকানাই। তােমরা কি আরম্ভ করেছ বল দেখি? দিনরাত কেবল কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ?
🕸️খেঁটুরাম। কি আরম্ভ করেছিস বল্ দেখি?
🕸️দুলিরাম। দিনরাত কেবল কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ?
🕸️পণ্ডিত। আমাকে মারতে-মারতে একেবারে কালশিরে পড়িয়ে দিয়েছে।
🕸️কেদার। দেখ, আমার ভাগ্নে ভালােমানুষ, এ-সব সইতে পারে—কিন্তু আমার সহ্য হয় না। রামা!
🕸️রামকানাই। যে আজ্ঞে।
রামকানাইয়ের খেঁটুরাম ও দুলিরামকে গলহস্ত
খেঁটুরাম। কী ভদ্দোরলােকের ঘাড়ে ধাক্কা!
🕸️দুলিরাম। চাকর দিয়ে ইন্সাল্ট্!
🕸️খেঁটুরাম। কী! এত বড় কথা! এক্ষুনি আমি রাগ করে বাড়ি চলে যাব। তােকে অপমান করেছে— কক্ষনাে এখেনে থাকিস না—আচ্ছা থাক, এবার মাপ করা গেল। আর একবার করলে টের পাইয়ে দেব। আমার গাঁয়ের লােক দুটোকে খবর দিচ্ছি।
[খেঁটুরাম ও দুলিরামের গম্ভীরভাবে প্রস্থান, রামকানাইয়েরও প্রস্থান]
পণ্ডিত। দেখলেন তাে! এর উপর তাে আর ওষুধ চলে না!
🕸️কেদার। হ্যাঁ—তা আসুন—একটু কাব্যালাপ করা যাক।
🕸️পণ্ডিত। এই মাটি করেছে–আচ্ছা-আজ রাত্রে বেশ করে শােনা যাবে।
🕸️কেদার। না, রাত্রে তাে সুবিধে হবে না—আমার চোখ খারাপ কিনা! শুনুন–ছেলেবেলায়, তখন আমার বয়স খুব কম ছিল–সাত বছর কি আট বছর হবে, কি বড় জোর নয় কি দশ কি এগারাে। সেই সময় আমি একখানা বই পড়েছিলাম–আঃ, সে একখানা বইয়ের মতাে বই বটে! এখনাে যখন তার কথা মাঝে-মাঝে স্মৃতিপথে উদিত হয়, মন যেন একেবারে উৎসাহে আপ্ল্ত হয়ে যায়। শুনুন—চমৎকার বই, বােধােদয়–শ্রীঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রণীত–
🕸️পণ্ডিত। ও আমি পাঁচশােবার পড়েছি।
🕸️কেদার। পড়েছেন? কেমন! স্বীকার করুন, ভালাে বই না? শুনুন–
কেদারকৃষ্ণের বােধােদয় পাঠ
পণ্ডিত। ঘ্যান-ঘ্যান করে মাথা ধরিয়ে দিলে–
ঘটিরাম ও কেষ্টার প্রবেশ
ঘটিরাম। মাথা ধরেছে? অ্যাঁ?
🕸️কেষ্টা। আজ বুঝি আমাদের ছুটি? অ্যাঁ?
পণ্ডিত কর্তৃক উভয়কে চপেটাঘাত
পণ্ডিত। যা! এখন ত্যক্ত করিস নে–
🕸️কেষ্টা। কিরে, তােকে মারল নাকি?
🕸️ঘটিরাম। দুৎ! আমাকে মারবে কেন? তােকে তাে মারল।
🕸️কেষ্টা। হ্যাঁ! নিজে মার খেয়ে এখন–
🕸️ঘটিরাম। আমি দেখলুম তােকে মারল—
[ঘটিরাম ও কেষ্টার প্রস্থান।]
কেদার। হ্যাঁ, তারপর শুনুন–
🕸️পন্ডিত। এ তাে আচ্ছা বেল্লিকের হাতে পড়া গেল! ইকী মশায়! বলছি শুনব না–কেন খামখা বিরক্ত কচ্ছেন?
🕸️কেদার। আহা! এইটে শুনে নিন—আমি ছেলেবেলায় একটা পােয়েট্রি লিখেছিলাম–তখন বয়েস অল্প। কিন্তু সে হিসেবে লেখাটা কেমন দেখুন–
কেদারকৃষ্ণের কবিতা পাঠ
একদা সকালে আমি খাইতেছিলাম ভাত
হেন কালে ধেয়ে আসে প্রকাণ্ড এক ব্যাঘ্র
ভয় পেয়ে সকলে তাে থরহরি কম্পমান
চিৎকারিল কেহ সুকরুণ আর্তরবে
অথবা যেমতি
লট্খটে গােরুর গাড়ি চলিবার কালে
প্রকাশে দারিদ্র্য নিজ বিচিত্র বিলাপে–
কেহ জপে রাম নাম—আমি হয়ে ক্রুদ্ধ
ডাকিলাম ভূত্যকে—“হরে, ধেয়ে যাও দ্রুত
রাস্তার দরজাটা করে দাও বন্ধ–
আর নিয়ে এস ঝট করে তিনতলা হতে
আমার সে দু-নলা বন্দুক’—এইরুপে
বাখানিল সবে মাের উপস্থিত বুদ্ধি
কহিল সকলে, ‘আজি মরিতাম নির্ঘাত
যদি না থাকিত ব্যাঘ্র পিঞ্জরের মধ্যে–‘
পণ্ডিত। হাড় জ্বালালে দেখছি–
🕸️কেদার। (স্বগত) বকে-বকে গলা শুকিয়ে
গেল—এখন রামাকে লেলিয়ে দি গিয়ে–
[কেদারকৃষ্ণের প্রস্থান]
খেঁটুরাম ও দুলিরামের প্রবেশ
পণ্ডিত। যাও, যাও এখন আমায় ঘাঁটিও না, আমার মেজাজ ভালাে নেই।
🕸️খেঁটুরাম। ওরে বাসরে, দুর্বাসা মুনির মেজাজ ভালাে নেই!
🕸️দুলিরাম। দেখিস ঘাঁটাস-টাঁটাস নে–শেষটায় ব্ৰহ্মতেজে ভস্ম হয়ে যাবি।
রামকানাইয়ের প্রবেশ
রামকানাই। ওয়াক্–থুঃ–থু–থু–থু–ওয়াক্–
🕸️খেঁটুরাম। ইকীরে? ওরকম কচ্ছিস কেন?
🕸️রামকানাই। অ্যাঃ–থু–থু–কেরােসিন তেল খেয়ে ফেলেছি।
🕸️দুলিরাম। কেরােসিন তেল খেয়েছিস?
🕸️খেঁটুরাম। সিকী! কেরােসিন খেতে গেলি কেন রে?
🕸️রামকানাই। সখ করে কি আর কেউ কেরােসিন খায়? গায়ে লেখা ছিল—লেমন্ সিরাপ!
🕸️দুলিরাম। এখন একটা দেশলাইয়ের কাটি খেয়ে ফেল্—তাহলেই সব ল্যাঠা চুকে যায়।
🕸️রামকানাই। কি পণ্ডিতমশায়, আপনার ন্যায়শাস্ত্রে আর কিছু বলে-টলে নি?
🕸️খেঁটুরাম। (মশা মারিতে মারিতে) আর দাদা ন্যায়শাস্ত্র-টাস্ত্র ভালাে লাগে না–বলি আজকাল মশাটা কেমন বল দেখি?
🕸️রামকানাই। বরাবর যেমন থাকে, ছােট-ছােট কালাে মতন, উড়ে বেড়ায়–
🕸️খেঁটুরাম। আহা, বলি লাগে কেমন?
🕸️রামকানাই। তা কি করে বলব? কখনাে ভাজাও করি নি, চচ্চড়িও খাই নি।
🕸️খেঁটুরাম। হ্যাঁ, বলি অত্যেচারটা দেখছ তাে?
🕸️রামকানাই। অত্যেচার আবার কি! চুরিও করে না, ডাকাতিও করে না, পরের বাড়িতে আড্ডাও মারে না–
🕸️পণ্ডিত। ওহে দেখ, তােমাদের ও-সব ইয়ার্কি মারতে হয় বাইরে গিয়ে কর—আমার কাছে নয়! রামা! আমার ব্যাকরণটা গেল কোথায়–
🕸️রামকানাই। ট্যাক্রম্?
🕸️পণ্ডিত। তবেরে, ণত্বমিচ্ছন্তি বর্বরাঃ, আমার সঙ্গে রসিকতা?
🕸️রামকানাই। আবার রসিকতা কি কললুম?
🕸️পণ্ডিত। বলি, বইখানা কি কাগে নিল, না উড়ে গেল বাতাসে?
🕸️রামকানাই। বাতাসা?
🕸️পণ্ডিত। হ্যাঁ, হ্যাঁ, বাতাসা–বাতাসা খাওয়াচ্ছি—এইরকম করে তােরা জিনিসপত্র লােকসান করবি? ব্যাটা হতভাগা জোচ্চোর–
পণ্ডিতের রামকানাইকে প্রহার। দুলিয়াম ও খেঁটুরামের পলায়ন
রামকানাই। মেরে ফেললে রে! উঃ–ইকী মশাই! দাঁড়াও আমি মামাবাবুকে ডাকছি, আর পুলিসে খবর দিচ্ছি।
🕸️পণ্ডিত। ওহে শােনাে-শােনাে–আমি কিন্তু সেরকম ভাবে মারি নি।
🕸️রামকানাই। মেরেছ তার আবার রকম বেরকম কি হে? পুলিস! পুলিস! উঃ!
রামার পতন। কেদারের প্রবেশ। পন্ডিতের পলায়ন
কেদার। কিরে, চেঁচিয়ে বাড়ি মাথায় কললি যে! ব্যাপারটা কি?
🕸️রামকানাই। আমায় মেরেছে! উঃ–আমায় মেরেছে, উঃ! কান দুটো ভোঁ-ভোঁ কচ্ছে–মাথা ঘুরছে!
🕸️কেদার। মেরেছে! বাঃ! এই তাে চাই। দাঁড়া এইসা চাল চালব, একেবারে বাজি মাত্। তুই এক কাজ কর, সেই দাড়িটা আর লাল পাগড়িটা ঠিক করে রাখ। আর ঐ উঠোনটায় বসে বসে আর্তনাদ করতে থাক, যখন ‘কোন্ হ্যায় রে’ বলে ডাক দেব অমনি এসে হাজির হবি—একেবারে রামসিং দারোগা, বুঝলি তাে? তুই খালি চেহারাটা দেখিয়ে যাবি—বােল-চাল সব আমি দেব। বাঃ আপনা থেকে দিব্যি কাজ এগিয়ে গেল, তারপর ও দুটোকে সরাতে কতক্ষণ?
[রামকানাইয়ের প্রস্থান]
পণ্ডিত। রামার কি হয়েছে? বেশি কিছু হয় নি তাে?
🕸️কেদার। না, না, বেশি কিছু হয় নি। খান চার-পাঁচ পাঁজর ভেঙে গেছে আর ডিজেসচান অফ্ দি লান্গ্স—সাংঘাতিক! তা আপনি কিছু ব্যস্ত হবেন না। ও ব্যাটা আবার পুলিসে খবর না দেয়! সেবারে একটা এরকম কেস হয়েছিল—পুলিসে টের পেয়ে–পাঁচ বছরের মতাে চালান করে দিয়েছিল।
🕸️পণ্ডিত। অ্যাঁ! অ্যাঁ! পাঁচ বছর!!
🕸️কেদার। আপনি ব্যস্ত হবেন না! উঃ–সেবারে একটা লােক মারামারি করেছিল তাকে দিয়েছিল ঘানি ঠেলতে। বলব কি মশাই, দেড় মাসে অর্ধেক রােগা!
🕸️পণ্ডিত। অ্যাঁ-অ্যাঁ একেবারে অর্ধেক! অ্যাঁ!
🕸️কেদার। তা আপনি বেশি ভাববেন না–ঐ পুলিস ব্যাটারা কোনরকমে টের না পেলেই হল—কিন্তু আজকাল যেরকম গােয়েন্দা টিকটিকির আমদানি হয়েছে—কোন কথা লুকোবার জো নেই–আপনি কবার হাই তুললেন, তুড়ি দিলেন –সব খাতায় লেখা! সেবার এক ব্যাটা বামুন মারামারি করে লুকিয়েছিল। লুকোলে হবে কি! পুলিসে টের পেয়ে ধরে এনে পঁচিশ দফা জুতো!
🕸️পণ্ডিত। অ্যাঁ! অ্যাঁ! বামুন? জুতাে!!
🕸️কেদার। বাইরে কে? কোন্ হ্যায় রে? তা আপনি বেশি ব্যস্ত হবেন না। আমি থাকতে ভয় কি? কিরকম ভাবে মেরেছিলেন বলুন তাে?
🕸️পণ্ডিত। খুব আস্তে পিঠের এইখেনে–
🕸️কেদার। পিঠে! এইখেনে! সর্বনাশ! ৭৯৪ ধারা! এর উপর তাে আমার হাত নেই–তা আপনি বেশি চিন্তিত হবেন না। আমি দারোগাবাবুকে বলে-কয়ে আপনার মেয়াদ কমিয়ে দেব।
খেঁটুরাম ও দুলিরামের শশব্যস্তে প্রবেশ
খেঁটুরাম। এক ব্যাটা পুলিস ইদিকে আসছে!
🕸️দুলিরাম। আমায় দেখে রুল উঁচিয়ে আসছিল। আপনার বাক্সের মধ্যে একটা সােনার চেন ছিল–আমি কিন্তু সেটা চুরি করি নি!
🕸️খেঁটুরাম। চুরি হবে কোত্থেকে—যেখানে যা থাকে আমরা সব যত্ন করে তুলে রাখি।
খেঁটুরাম ট্যাঁক দেখাইল। পুলিসের বেশে রামকানাইয়ের প্রবেশ
খেঁটুরাম। এইরে! এইরে!
🕸️দুলিরাম। এই যে সিদিন নিতাইবাবুর একটা ঘড়ি চুরি হয়েছিল আমি কিন্তু তার কিছুই জানি না!
🕸️খেঁটুরাম। আর, সেদিন যে চৌরাস্তার মােড়ে একটা লােক বেদম ঠেঙা খেয়েছিল, আমি কিন্তু তার গায়ে হাতও দিই নি।
🕸️দুলিরাম। আমার পুঁটলির মধ্যে সােনার চেন, নক্সা কাটা রুপাের ঘড়ি, দুটো আংটি এ-সব কিচ্ছু নেই।
🕸️পণ্ডিত। হাম্ পূজোর সময় তােম্কো বহুত মিষ্টান্ন আউর পুলিপিঠে খাওয়ায়গা।
🕸️কেদার। দারােগাবাবু আতা হ্যায়?
🕸️পুলিস। হাঁ বাবু–
🕸️কেদার। হাত কাড়া লেকার?
🕸️পুলিস। হাঁ বাবু–
🕸️কেদার। বাড়ি সারচ্ হােগা?
🕸️পুলিস। হাঁ বাবু–
🕸️কেদার। সব মাটি কললে–আচ্ছা, আমি ও ব্যাটাকে একটু ফাঁক তাল্লায় সরিয়ে নিচ্ছি, আপনি এই সুযােগে সরে পড়ুন আর এ-মুখো হবেন না–বছর দুই বাড়ি থেকে বেরােবেন না! তােমরা পালিও না কিন্তু। (পুলিসের প্রতি) আচ্ছা চল—
[কেদারকৃষ্ণ ও পুলিসের প্রস্থান]
পণ্ডিত। আর থামাথামি নেই—একেবারে সেই বদ্যি পাড়ায় মামার বাড়ি গিয়ে উঠব—ওরে ঘটে, ওরে কেষ্টা, দৌড়ে আয়–ও ঘর থেকে আমার বিছানাটা আর শব্দকল্পদ্রুমখানা নিয়ে আয় তাে। শিগ্গির বাড়ি চল।
[পণ্ডিতের প্রস্থান]
দুলিরাম। আর কেন দাদা? পৈত্রিক প্রাণটি নিয়ে সরে পড়া যাক-না!
🕸️খেঁটুরাম। হ্যাঁ—পুলিসের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতায় কাজ কি দাদা?
🕸️দুলিরাম। জমিদার ব্যাটার কাণ্ডটা দেখ—আমাদের কি নাস্তানাবুদটাই কললে–চাকর দিয়ে ঘাড়ে ধাক্কা তার উপরে পুলিস!
🕸️খেঁটুরাম। আমরা বেচারারা যে দুটি করে খাচ্ছিলাম, সে আর তার সহ্য হল না।
🕸️দুলিরাম। ছােটলােক! ছােটলােক! ওরে, গল্প আক্কেলগুড়ুমটা উঠিয়ে নে! যথা লাভ!
[খেঁটুলাম ও দুলিবামের প্রস্থান]
কেদারকৃষ্ণ ও রামকানাইয়ের প্রবেশ
কেদার। দেখলি তাে রামা! একেই বলে বুদ্ধির্যস্য বলং তস্য–মানুষ চেনা চাই! ঠিক লক্ষণ দেখে ওষুধ দিতে হয়–
🕸️রামকানাই। আজ্ঞে–ঝড়ে কাগ মরে আর ফকিরের কেরামত বাড়ে–
[উভয়ের প্রস্থান]
সঙ্গে-সঙ্গে জুড়িব প্রবেশ ও গান
ওরে ও চণ্ডীচরণ!
তােমার কি নাইরে মরণ।
কোন্ সাহসে চাকর ডেকে
ভদ্রলােকের কান মলাও।
।। সমাপ্তি।।