
ভুল গল্পের ভুলগুলি
(সুকুমার রায়)
(১) গোড়াতেই রামবাবুকে কৃপণ বলা হইয়াছে, কিন্তু গল্পে তাঁহার স্বভাবের যে পরিচয় দেওয়া হইয়াছে তাহা মোটেই কৃপণের মতো নয়।
(২) বলা হইয়াছে রামবাবু ও বৃন্দাবনবাবুর মধ্যে বহুকালের বন্ধুতা অথচ পরেই বলা হইয়াছে কাহারো সঙ্গেই বৃন্দাবনবাবুর আলাপ পরিচয় নাই।
(৩) প্রথমেই বৃন্দাবনবাবুর মাথাভরা টাক বলা হইয়াছে, অথচ তিনি টিকি দুলাইতেছেন।
(৪) প্রথমে বলা হইয়াছে তাঁহার বয়স ৬০, কিন্তু তিনি চাকরি করিয়াছেন ৫৬ বৎসর।
(৫) বলা হইয়াছে যে গিন্নি আর জ্যাঠামহাশয় ছাড়া তাঁহার আর কেহ নাই, কিন্তু পরে তাঁহার এক ভাইপোকে হাজির করা হইয়াছে।
(৬) প্রথমে পোস্টমাস্টারের নাম বলা হইয়াছে প্রাণশঙ্কর, পরে লেখা হইয়াছে প্রিয়শঙ্কর।
(৭) রামবাবু ইংরাজি জানেন না, অথচ তিনি চটপট ইংরাজি টেলিগ্রাম পড়িতেছেন।
(৮) রামবাবু পাটের তেলের ব্যবসা করেন কিন্তু এরকম কোন তেল বা ব্যবসার কথা শোনা যায় না।
(৯) তাঁহার বাড়ি দোতলা বলা হইয়াছে কিন্তু চাকর গেল তিনতলায়।
(১০) রামবাবুর আটটি ছেলে, কিন্তু মাত্র সাতটির খবর পাওয়া যাইতেছে।
(১১) রামবাবুর মেয়ে নাই কিন্তু তাঁহার জামাই আসিয়া হাজির।
(১২) তাঁহার চশমার যে বর্ণনা দেওয়া হইয়াছে সেরূপ চশমা কপালে তোলা যায় না।
(১৩) প্রথমে বলা হইয়াছে ঘরে কোনরকম আসবাবপত্র নাই, কিন্তু পরে সোফার উল্লেখ করা হইয়াছে।
(১৪) বলা হইয়াছে, ‘বড়দিনের ছুটির মধ্যে এক রবিবার’ বৃন্দাবন রামবাবুর সঙ্গে দেখা করিলেন; গল্পের ঘটনা তাহার ‘সাত দিনের পরে’ সুতরাং সেদিন বৃহস্পতিবার হইতেই পারে না।
(১৫) বড়দিনের সপ্তাহখানেকের মধ্যেই পূজার ছুটি অসম্ভব।
(১৬) বৃন্দাবনবাবুর বয়স গোড়াতেই ৬০ বলা হইয়াছে। তাহা হইলে তাঁহার জ্যাঠামহাশয়ের বয়স মোটে ৬৯ হইতেই পারে না।
(১৭) চাঁদকে যখন আমরা সূর্যের কাছাকাছি দেখি তখনই তাহার চেহারা থাকে ‘সরু নখের মতো।’ সন্ধ্যার সময় পুবদিকে, অর্থাৎ সূর্যের উলটা দিকে তাহার ওরকম চেহারা অসম্ভব।
সন্দেশ(১৩২৮)
।। সমাপ্তি।।