।। ব্যাঙের রাজা।।

রাজবাড়িতে যাবার যে পথ, সেই পথের ধারে প্রকান্ড দেয়াল, সেই দেয়ালের পাশে ব্যাঙেদের পুকুর। সোনাব্যাঙ, কোলাব্যাঙ, গেছোব্যাঙ, মেঠোব্যাঙ—সকলেরই বাড়ি সেই পুকুরের ধারে। ব্যাঙেদের সর্দার যে বুড়ো ব্যাঙ, সে থাকে দেয়ালের ধারে, একটা মরা গাছের ফাটলের মধ্যে, আর ভোর হলে সবাইকে ডাক দিয়ে জাগায়—“আয় আয় আয়—গ্যাঁক্ গ্যাঁক্ গ্যাঁক্—দেখ দেখ দেখ—ব্যাঙ ব্যাঙ ব্যাঙ—ব্যাঙাচি।” এই বলে সে অহংকারে গাল ফুলিয়ে জলের মধ্যে ঝাঁপ দিয়ে পড়ে, আর ব্যাঙগুলো সব “যাই যাই যাই—থাক থাক থাক” ব’লে, ঘুম ভেঙে, মুখ ধুয়ে দাঁত মেজে, পুকুরপারের সভায় বসে।
🕸️একদিন হয়েছে কি, সর্দার ব্যাঙ ফুর্তির চোটে লাফ দিয়েছে উলটোমুখে ডিগবাজি খেয়ে—আর পড়বি তো পড়, এক্কেবারে দেয়াল টপকে রাজপথের মধ্যিখানে। রাজা তখন সভায় চলেছেন, সিপাইশান্ত্রী লোকলস্কর দলবল সব সঙ্গে চলছে। মোটা মোটা সব নাগরাই জুতো, খটমট ঘ্যাঁচম্যাঁচ করে ব্যাঙ বুড়োর মাথার ওপর দিয়ে ডাইনে বাঁয়ে সামনে পিছে এমনি রোখ করে চলতে লেগেছে, যে ভয়ে ব্যাঙের প্রাণ তো যায় যায়! হঠাৎ কোত্থেকে কার একটা লাঠি না ছাতা না কিসের গুঁতো এসে এমনি ধাঁই করে ব্যাঙের গায়ে লেগেছে যে সে বেচারা ঠিকরে গিয়ে পথের ধারে ঘাসের ওপর চিৎপাত হয়ে পড়েছে।
🕸️ব্যাঙ বুড়োর খুব লেগেছিল, কিন্তু হাতও ভাঙে নি, পাও ভাঙে নি, সে আস্তে আস্তে উঠে বসল—আর চারিদিকে তাকিয়ে, দেয়ালের গায়ে একটা ফাটল দেখে, তাড়াতাড়ি তার মধ্যে ঢুকে পড়ল। সেখান থেকে খুব সাবধানে মুখ বার করে সে চেয়ে দেখল, মাথায়-মুকুট রঙিন-পোশাক রাজা, আলো ঝলমল চতুর্দোলায় চড়ে সভায়…